অপেক্ষার রং গল্প

🌺 অপেক্ষার রং

শান্তপুর নামের ছোট্ট শহরটা খুব চুপচাপ। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরনো মহুয়া গাছ। সেই গাছের নিচেই প্রায়শই বসত আরিয়ান। সাদা শার্ট, চোখে স্বপ্ন—ছেলেটা পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় যাবে, বড় কিছু করবে—এমন স্বপ্ন লালন করে।

অন্যদিকে, একই শহরের মেয়ে সাদিয়া। ওর হাসি যেন সকালবেলার শিশির, কিন্তু চোখের গভীরে আছে এক অদ্ভুত দুঃখ। সাদিয়া সবসময় চুপচাপ থাকে, কিন্তু কবিতা লিখতে খুব ভালোবাসে।

একদিন নদীর ঘাটে দেখা হলো আরিয়ান আর সাদিয়ার।
সেদিন আকাশ ছিল গোলাপি রঙে রাঙানো।

— “আপনি কি কবিতা পড়েন?” সাদিয়া জিজ্ঞেস করলো।
— “পড়ি না, তবে শুনতে ভালোবাসি।” আরিয়ান মুচকি হেসে উত্তর দিলো।

সেদিন থেকে দু’জনের কথা বলা শুরু।
কবিতা দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে ওরা দু’জন দু’জনের গল্প, স্বপ্ন আর ভয় ভাগাভাগি করে নিতে লাগল।

🌿

কয়েক মাস পরে আরিয়ান ঢাকায় চলে গেল। নতুন শহরের কোলাহলে ডুবে গেলেও প্রতিদিন রাতে সে নদীর ধারের সেই মহুয়া গাছটাকে মনে করত। আর সাদিয়া? সে প্রতিদিন ডায়েরিতে লিখত—“আজও অপেক্ষা করছি।”

সময়ের স্রোতে বছর কেটে গেল।
আরিয়ান চাকরি পেল, ব্যস্ত হয়ে উঠল। যোগাযোগ কমতে লাগল। সাদিয়া শুধু নীরবে অপেক্ষা করল।

🌧️

একদিন ঝড়ের রাতে সাদিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে ডায়েরিটা বুকে চেপে রাখল। ওর লেখা শেষ লাইন ছিল—
“হয়তো সে আর ফিরবে না… তবুও আমি অপেক্ষা করব, কারণ অপেক্ষারও একটা রং আছে।”

হঠাৎ একদিন, শহরে ফিরে এলো আরিয়ান।
মহুয়া গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে সে ডায়েরিটা পেল—ভিজে গেছে বৃষ্টিতে, কিন্তু শব্দগুলো অমলিন।

সে ছুটে গেল সাদিয়ার বাড়িতে।
দেখল—সাদিয়া বারান্দায় বসে আছে, মুখে দুর্বল হাসি।

— “তুমি ফিরে এসেছো?”
— “আমি তো কোনোদিন যাইনি, শুধু দেরি করেছি।”

🌸 সমাপ্তি

সেদিন থেকেই দু’জনের গল্প নতুন করে শুরু হলো।
নদীর ধারে, মহুয়া গাছের নিচে, তারা আবার স্বপ্ন দেখতে লাগল।
কারণ ভালোবাসা মানেই শুধু পাওয়া নয়, কখনো কখনো অপেক্ষারও এক অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে।

 

Previous Post Next Post